ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

করোনা মহামারিতেও হতদরিদ্রদের কপালে জুটেনি ১০ টাকা মুল্যের চাল!

আনোয়ার হোছাইন, ঈদগাঁহ :: সংবাদ প্রকাশের জেরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের হতদরিদ্রদের ১০ টাকা মুল্যের চাল বিতরণে অনিয়মের নানা কাহিনী। বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারিতে প্রদত্ত অধিকাংশ চালের কিস্তি আত্মসাৎ করে বলে উপকারভোগিদের অভিযোগ। রবিবার ২৪ ও ২৫ অক্টোবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারুয়াখালীতে হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে নানা অনিয়ম ও আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশের পর একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে পেছনের নানা ঘটনা। ভুক্তভোগি অনেক উপকারভোগি ও পরিষদের সদস্যরা ছমুদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ জিয়াউল হক শিশুর অনিয়ম ও আত্মসাতের ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ জুড়ে দারিদ্র্যতা দূরি করণের লক্ষ্যে নামে মাত্র ১০ টাকা মূল্যে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ প্রকল্প শুরুর করে দেশ জুড়ে।এ চাল বিতরণে দেশ জুড়ে ডিলার নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৫,৬,৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয় মেসার্স ছমুাদা এন্টারপ্রাইজকে।ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিধি মোতাবেক উপকারভোগিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ থেকে তালিকা সরবরাহ করা হয়।প্রথমদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোঃ জিয়াউল হক শিশু মাস দু’য়েক উপকাভোগিদের চাল বিতরণ করে।পরে সময় মত চাল আনতে গেলে কার্ডটি জরুরি প্রয়োজন বলে জব্দ করে নেয় অধিকাংশ উপকারভোগির কাছ থেকে।এভাবে মাসের পর মাস উক্ত ডিলারের অধীন উপকারভোগিদের কার্ড কৌশলে জব্দ করে রেখে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতি কিস্তির চাল কার্ডে বিতরণ দেখিয়ে টিপসহি ও স্বাক্ষর নিজে দিয়ে দেয়।উপকারভোগীরা চাল চাইলে কার্ড দেখাতে বলে।কিন্তু কার্ড উক্ত ডিলার আগে থেকে জব্দ করে রাখতে তারা চালাতো পায়নি।বরং কার্ড ফেরত চাইলে প্রতি কার্ড পিছু ৫শ -১ হাজার টাকা দাবি করে।অনেকে টাকার বিনিময়ে কার্ড ফিরিয়ে নিয়ে দেখতে পায়,তাদের কার্ডে ২০ থেকে ২৫ কিস্তি চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা চাল পেয়েছে ২ থেকে ৩ কিস্তি। তাও আবার প্রতি বস্তায় ২২ থেকে ২৩ কেজি।উপকারভোগীদের কার্ড সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ হয়ে পরিষদের মাধ্যমে বিতরণে নিয়ম থাকলেও উক্ত ডিলার জিয়াউল হক শিশু কিভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ গোপনে নিয়ে এসে উপকারভোগিদের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন তা চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদারের বোধগম্য হচ্ছে না বলে জানান।চেয়ারম্যান এবং ভুক্তভোগীদের ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজুল হক জানান,শুধু তার ওয়ার্ডের
নয়, এ ডিলারের অধীন সব ওয়ার্ডের উপকারভোগিদের চাল সে এভাবে মাসের পর মাস আত্মসাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলছে।তার এ অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে তাদের দাবি।তার অব্যাহত অনিয়মের স্বীকার কয়েকজন উপকারভোগি হচ্ছে
৭ নং ওয়ার্ড ঘোনা পাড়ার রাজিয়া বেগম,স্বামী জসিম উদ্দিন কার্ড নং-৪৮১,শানু বেগম-স্বামী আব্দুর রহিম, হোসনে আরা স্বামী রহিম উল্লাহ , রহিমা খাতুন স্বামী মৃত জামাল হোছেন, এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নতুন কার্ডের জন্য ৫শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে তাদের কার্ড দেয় বলে সরাসরি প্রতিবেদককে জানান।এছাড়া পুরাতনদের মধ্যে একই ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আবদুল হোসেন কার্ড নং ৫১৭,কালা মিয়ার ছেলে এরশাদুল হক কার্ড নং ৫২৫,ছব্বির আহমদের ছেলে জয়নাল উদ্দিন কার্ড নং ৫২৬, ছায়ের মোহাম্মদের স্ত্রী মমতাজ বেগম কার্ড নং ৫০৩,আবদুল আজিজের স্ত্রী জাহানারা বেগম কার্ড নং ৫০৪, মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী ফরমুজা বেগম ও আলী হোসনের স্ত্রী মনজুরা বেগম কার্ড নং ৪৯৩,পুরাতনের মধ্যে আলী হোসনের স্ত্রী মনজুরা এবং তার ছেলে খলিল জানায়,তার নামে কার্ড ইস্যুর পর থেকে মাত্র ১/২ বার চাউল পেয়েছেন এর পর আর পাননি ।সম্প্রতি এ ঘটনা জানাজানি হলে তার ছেলেকে ডেকে এক বস্তা চাউলসহ কার্ডটি দেয়।কিন্তু কার্ডে প্রতিমাসে চাউল নেয়ার টিপসহি রয়েছে।সবচেয়ে বড় অনিয়ম ধরা পড়ে রহিমা আক্তার স্বামী ফরিদুল আলম কার্ড নং ৪৭৯, ২৪ অক্টোবর শনিবার দুপুরে চাউল নিয়ে ফেরার পথে এ প্রতিবেদকের সামনে পড়ে। তার কাছে থাকা কার্ডে দেখা যায়,পুরো কার্ডের লিখা কাটা ছেঁড়া এবং ফ্লুইড দিয়ে মুছে অন্যের কার্ডে তার নাম ও নং বসিয়ে এক বস্তা চাউল দেয়া হয়েছে। তার কাছে জানতে চাইলে বলে, সে আজকে টাকা দিয়ে প্রথম কার্ড এবং চাউল পেয়েছে এবং দু’টি টিপসহি নিয়েছে। অথচ কার্ডে দেখা যায় ২০ কিস্তি চাউল পূর্বে দেয়া হয়েছে। (ভুক্তভোগীদের জবানবন্দির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের নিকট আছে) এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনে প্রতিবেদক সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সাথে সাক্ষাতের সংবাদ পেয়ে উক্ত ডিলার মোঃ জিয়াউল হক শিশু সংবাদটি প্রকাশ না করতে তার সহকর্মী অন্য ডিলার ও প্রভাবশালী কয়েকজনের মাধ্যমে প্রতিবেদকের সাথে দেনদরবার করেন।রিপোর্ট লিখা পর্যন্তও তার দৌড় ঝাপ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে দেরিতে হলেও এ ডিলারের অনিয়ম ও আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক তদন্ত করত তার ডিলারশীপ বাতিল করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা ।

পাঠকের মতামত: